ফারুক আহমেদ
পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমানদের অন্তবিহীন সমস্যা, তার আত্মানুসন্ধান বা সমাধানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দুরের কথা, ‘কওম’-গত আন্তরিক উদ্যোগও লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠেনি। যারা বিষয়টি নিয়ে ভাবিত, সদর্থে চিন্তাভাবনা ও দায়বদ্ধ থাকাটা জরুরি মনে করেন, তাঁরা জানেন যে কেন একটি জাতিসত্তা এতো উপেক্ষিত, শিক্ষায় অনগ্রসর, কেন এতো দরিদ্র, আর কেনই বা মুসলমান বুদ্ধিজীবী সমাজ স্ব-সম্প্রদায়ের সমস্যাবলির স্বরূপ উদঘাটনে ও নিরসনের দিক নির্দেশ সম্পর্কে আগ্রহী নন।
হালকা একটি আলোর রেখা সম্প্রতি দৃষ্টিগোচর হয়ে উঠছে। কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানী আলোচ্য সমস্যাবলী নিয়ে গবেষণা করছেন এবং গ্রন্থাকারে তা পাঠকসজ্জনের সামনে পেশ করছেন। এঁদের মধ্যে খাজিম আহমেদ; এই উপমহাদেশ বিষয়ক ইতিহাসবেত্তা গবেষক, দেশ-বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাঙলার কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী জাতিসত্তার মর্যাদার অন্বেষক, অনন্যসাধারণ প্রাবন্ধিক; বিশিষ্টতম।
এই জাতীয় কাজ আগে হয়নি কখনও, প্রকাশক হিসেবে সে দাবী করছিনা। সোজাসুজি বলা যেতে পারে, এই প্রকাশনার মতো নির্মোহ বিশ্লেষণ এর আগে হয়নি।
খাজিম আহমেদ পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষণ মারফত যথার্থ সত্যটা তুলে এনেছেন। এই খানেই তাঁর বিশেষত্ব।
‘উদার আকাশ’-প্রকাশনের পৃষ্ঠপোষক আর শুভানুধ্যায়ীদের সামনে এমন একটি সাহিত্য-নির্মাণ হাজির করতে পেরে আমি ব্যক্তিগতভাবে গর্বানুভব করছি।
“পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা” নামক প্রবন্ধগ্রন্থে ঐতিহাসিক খাজিম আহমেদ, একটি জাতিসত্তার ইতিহাস, উৎপত্তি-বিকাশ, রাজনৈতিক অবস্থান, সামাজিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক অধৌবিকাশ, ধর্মীয় পরিচয়ের প্রশ্নে উপেক্ষা, ‘মিশ্র সংস্কৃতি’ বা ‘কমপোজিট কালচার’-এর অনিঃশেষ গুরুত্ব, অর্থনৈতিক নিঃসীম দুর্বলতা সর্বোপরি মানবীয় মর্যাদা নিয়ে ‘বেঁচে-বর্তে’ থাকার প্রয়োজনে পরম সাদরে লালিত ধর্মনিরপেক্ষতা কেন প্রয়োজন– ইত্যাকার বিষয় নিয়ে বিস্তৃত চর্চা করেছেন। অগণন প্রবন্ধাদির মধ্যে থেকে ১৭ টি রচনা নিয়ে গ্রন্থটি প্রকাশিত।
প্রায় অর্ধ-শতকের ওপর তিনি সহৃদয় পাঠকবর্গের সঙ্গে রয়েছেন। সাবেক বাঙালিয়ানা, মিশ্র-সংস্কৃতি আর সমন্বয়ে বিশ্বাসী খাজিম আহমেদ কলকাতা কেন্দ্রিক প্রায় প্রত্যেকটি দৈনিক সংবাদপত্রসহ বিস্তর লিটল ম্যাগাজিনে কাহন কাহন লিখেছেন। সুজন পাঠক আর বিদ্বৎসমাজের স্বীকৃতি তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।
“সঠিক ইতিহাস রচনা করতে গেলে কোনও পক্ষ, কোনও ধর্ম ও মতবাদের প্রতি বিশেষ আস্থা রাখা যে সর্বসময়ে উপেক্ষণীয়, তা তাঁর রচনায় বারে বারে পরিস্ফুট। যেমন বর্তমান গ্রন্থে ‘সেকুলারিজমের সওয়াল’ – নামে একটি প্রবন্ধ থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করি। তিনি লিখেছেন, “এই দেশীয় মুসলমান সমাজের বেদনা এইখানে যে, স্বধর্মী কোনও ব্যক্তিত্ব তার সমাজের দুর্বলতার দিকটি যুক্তি ও সহানুভূতির সঙ্গে পর্যালোচনা করেন নি।........ সাধারণভাবে মুসলিম নেতৃত্ব সস্তায় কেল্লাফতে করার জন্য এমন সব দাবি বা সমস্যার কথা তোলেন, যার ফলে অমুসলমানরা (এমনকি প্রগতিশীল অংশও) মুসলমানদের থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।........ শুধু মুসলমানদের নিয়ে যদি কেউ একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে চান, তাহলে সুনিশ্চিতভাবে তা হবে মুসলিম স্বার্থ বিরোধী।...... একমাত্র জন্মের সুবাদে মুসলমান নেতারা মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা করতে সমর্থ, সাধারণ উপেক্ষিত মুসলমান সমাজ আর কতকাল এই ধরনের প্রচারের শিকার হবেন, তা আমাদের জানা নেই।” 'দ্য সানডে ইন্ডিয়ান’ – পত্রিকায় (১০ মার্চ, ২০১৩) অত্যাধুনিক সাহিত্যিক, সাংবাদিক অরুণাংশু ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছেন, ‘আমরাও ঠিক জানিনা যে, আমাদের দেখার মধ্যে কোনও মুসলমান ঐতিহাসিক এবং সমাজচিন্তক......এই রকম সত্যতর মন্তব্য করেছেন কিনা।'
"খাজিম আহমেদ পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা
(উদার আকাশ, ২০০.০০) বইয়ে বাংলার মুসলমান সমাজের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেছেন।
আলোচনায় ফিরে এসেছে দেশভাগের প্রসঙ্গ, সংখ্যাগুরু সমাজের চোখে সংখ্যালঘুদের অবস্থানের মতো প্রসঙ্গ।” (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)।
''প্রবন্ধাদির মধ্যে অবশ্য পাঠ্য 'একটা উপেক্ষিত জাতিসত্তার উত্থানের ইতিহাস।' (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ মার্চ, ২০১২)
"অসাধারণ প্রবন্ধ রচেছেন ঐতিহাসিক ও সমাজতত্ত্ববিদ খাজিম আহমেদ..... কাউকে রেয়াত করে কথা বলেননি।" অরুণাংশু ভট্টাচার্য, (দ্য সানডে ইন্ডিয়ান, ১৩ মে, ২০১৩)
বিষয়বস্তুর পরিচয়
বর্তমান গ্রন্থটির প্রকাশক হিসাবে বিষয়বস্তু সম্পর্কে যৎকিঞ্চিত পরিচয় তুলে ধরা জরুরি বলে মনে করছি। ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস চর্চায় সাধারণ মুসলমান জনগোষ্ঠীকে কখনোই ভারতীয় ভূমিপুত্র বলে ধরাই হয় নি। সে কারণে চিরকালই তারা 'দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক' হিসেবেই থেকে গেছেন। এহেন অবস্থার যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে পশ্চিমবাঙলার মুসলমান জনগোষ্ঠীর যে হাঁড়ির হাল হয়েছে, তা অনুসন্ধানে লেখক খাজিম আহমেদ তাঁর “পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা” গ্রন্থটি রচনা করেছেন। একই সঙ্গে মুসলমান জাতির অতীত ঐতিহ্য সন্ধানের পাশাপাশি বর্তমান কালের পাকচক্রে তাঁদের অসহায়তাও লেখকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি।
বাঙালি মুসলমান : উৎপত্তি বিকাশ
সিন্ধু তীরবর্তী ভারতবর্ষে মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রথম পদচারণা তথা.... বিস্তার পদক্ষেপে নিপীড়ন নয়, নিবেদনই ছিল মৌল উপাদান। মহানবী (সাঃ)-র ‘হিন্দ’ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা আসলে তাঁর ভৌগলিক প্রজ্ঞাকেই মূর্ত করে তোলে। ভারত তথা বাঙলাভূমিতে ইসলাম ধর্মের বীজ বপন প্রসঙ্গে লেখক গভীর ইতিহাস চেতনারই আবহ রচনা করেছেন। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি নিছক ভোজবাজি দেখিয়ে বাঙলার তখ্ত থেকে রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করেন নি, তা খাজিম আহমেদ বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয়ত, জনাব আহমেদ অকপটেই দেখিয়েছেন, ইসলাম প্রচারে সুফিবাদের সদর্থক ভূমিকা। ‘Islam was in dire need of reform and revival’, ইসলাম বিস্তারে অসিযুদ্ধের প্রয়োজন পড়েনি।
বাঙালি মুসলমান : মর্যাদার সন্ধানে
অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয়দের দুনিয়াব্যাপী সম্প্রসারণ জনিত ধ্বংসাত্মক নীতিতে মুসলমানদের বিপর্যস্ত অবস্থা হয়েছিল। এ থেকে উত্তরণের পথ ছিল বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রগতিশীল ভাবনা, যা পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় মুসলমান দেশগুলি উপলব্ধি করে জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেছিল। বাঙলার মুসলমান সমাজ প্রথমাবস্থায় আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে না পেরেই ক্রমে ক্রমে তলানিতে এসে ঠেকে। এই অবস্থায় ইন্ধন জুগিয়েছিল সংখ্যাগুরুদের উন্নাসিকতা আর শাসকগোষ্ঠীর দেশ বিভাজনের কুফলতা।
‘মুসলমানরা নিজেদের ধর্মীয়সত্তা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছিল,
সাম্প্রদায়িকতা : উপেক্ষিত জাতির উত্থান–বিকাশ
এই শিরোনামে লেখকের তিনটি প্রবন্ধ – ১. ‘একটি উপেক্ষিত জাতিসত্তার উত্থানের ইতিহাস’, ২. ‘বাঙলায় একটি জাতিসত্তার বিকাশের আদি ইতিহাস’, ৩. ‘আধুনিক ভারতে সাম্প্রদায়িকতাবাদের শিকড় সন্ধান’ – এ ইতিহাসবেত্তা জনাব খাজিম আহমেদ আত্মানুসন্ধান করেছেন। তিনি বলেছেন, ঔপনিবেশিক অধোবিকাশ হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে প্রতিযোগিতার জন্ম দিয়েছিল। সাম্প্রদায়িকতাবাদ প্রকাশে তৎকালীন পত্রপত্রিকার বেলাগাম ভূমিকা অত্যন্ত ব্যথিত করে। প্রকৃত ইতিহাসচর্চার অনুসন্ধান করেছেন খাজিম আহমেদ তথ্যের ভিত্তিতে।" (সন্দীপ দত্ত, প্রাত্যহিক খবর, ১ জানুয়ারি, ২০১২)।
বিপন চন্দ্রের ‘কমিউনালিজম ইন মর্ডান ইন্ডিয়া’ নামক গ্রন্থের মূল্যায়নে খাজিম আহমেদ প্রশংসনীয় ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।
বিভাগোত্তর “পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা”
১৯৪৭ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক প্রসারের কালে কেমনভাবে মুসলমান জনসত্তা ধুঁকতে ধুঁকতে টিকে গেছে তার সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে উপরোক্ত প্রবন্ধটিতে। অত্যন্ত বলিষ্ঠ এবং সাহসিকতার সঙ্গেই লেখক আপন কথা বলে গেছেন। তাঁর এই ভাষ্যরূপ সমবেত আর্ত পীড়িত, বুভুক্ষু বঞ্চিত মুসলমান জনগোষ্ঠীরই ভাষা। মহানজ্ঞানী অন্নদা শঙ্কর রায়ের উপর তৎকালীন সরকারের যে সাম্প্রদায়িক চাপ সৃষ্টি, তা ‘সেকুলার ইমেজ’-কে সরাসরি কলুষিত করে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের মুসলমান প্রীতি মনে রাখার মত ঘটনা বলেই খাজিম আহমেদ আর সমস্ত মুসলমানদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। সর্বোপরি লেখক সুনিপুণভাবে দেখিয়েছেন যে, শুধু শাসক হিসেবেই নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্ব বিবেচনাতেও সিপিএম বাঙালি মুসলমানদের নির্লজ্জ ভাবে বঞ্চিত করেছে। ঘটনাক্রমে কমিউনিস্ট নেতা মুজফ্ফর আহমদ এবং মনসুর হবিবুল্লাহ’র মতো সর্বজন মান্য নেতৃত্বও সিপিএমের পক্ষ থেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছেন।
বাঙালি মুসলমান : ট্র্যাডিশন চলছে
খাজিম আহমেদ এই প্রবন্ধে সামাজিক আর রাজনৈতিক ট্র্যাজিক চরিত্র মুসলমানদের সম্পর্কে সদর্থক ভূমিকা প্রেরণের বার্তা দিয়েছেন। জ্যোতি বসুর – ‘জালিম জমানা’ সম্পর্কে অকুতোভয় খাজিম আহমেদ ‘খুল্লাম খুল্লা’ মন্তব্য করেছেন। মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়কেও লেখক রেয়াত করেন নি।
বাঙালি মুসলমানের সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে
১৯১৭ থেকে ১৯৭২ মধ্যবর্তী কালের সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনায় তথ্যের প্রাচুর্য আমাদের বিস্মিত করে! আগামী প্রজন্মের কাছে এটি নিশ্চিত দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইতিহাসচর্চা ও সাম্প্রদায়িকতা
পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যানুসন্ধানে খাজিম আহমেদ বিকৃত ইতিহাস চর্চার উৎস নির্ণয় করেছেন। তাঁর মতে, স্বাধীনতা লাভের সাত দশক পরেও দুই যুযুধান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য তো স্থাপন হয়ইনি, উপরন্ত সন্দেহ আর অবিশ্বাস ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাসচর্চা স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রকৃত মুল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছে।
‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জীবন অনুশীলন ও শিক্ষাদর্শন’, ‘বহুজাতির ভারত : ঐক্যভাবনা’, ‘সেকুলারিজমের সওয়াল’ শীর্ষক প্রবন্ধগুলোর আবেদন শাশ্বত। বস্তুত গ্রন্থটি পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমানদের অন্তহীন সমস্যার ‘ঈক্ষণ-বিক্ষণ’।
বিষয়বস্তুর পরিচয় অংশটি, কাজি মুজিবর রহমান কৃত মূল্যায়নের অতিসংক্ষিপ্ত সারাৎসার, ‘বাঙালি মুসলমানের....স্বরূপ সন্ধান’ (আবার যুগান্তর, ৩১ মার্চ, ২০১৩)।
গ্রন্থটির প্রকাশক হিসেবে আমি অনুধাবন করেছি, পরিস্থিতি ও ঘটনাক্রম পর্যালোচনার ক্ষেত্রে খাজিম আহমেদের যৌক্তিক মনোস্বভাব ও নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ বিস্ময়কর। তাঁর নিরীক্ষণ-প্রক্রিয়ায় ‘পক্ষপাতী পাটগনিত’-এর ছায়া পড়েনি বলে, তাঁর ইতিহাস আলোচনায় তথাকথিত বনস্পতি ঐতিহাসিকেরও পক্ষপাতিত্ব অনায়াসে ধরা পড়ে। যা পাঠককে সত্যঋদ্ধ করে। বস্তুত তাঁর উপস্থাপনা ভাবনা– অনুভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে। তাঁর বিরল পরিশ্রম– কুশলতা আমাদের বিস্মিত করে।
গবেষক খাজিম আহমেদ আশ্চর্য কৌশলে খারিজ করেছেন-- তীক্ষ্ণ নীরদ সি চৌধুরীর বক্তব্য। নীরদ বাবু মন্তব্য করেন, রামমোহনের পর আর কোন বাঙালি হিন্দুর মধ্যে তিনি নাকি ইসলামি বিষয়ে জ্ঞান দেখতে পান নি। কিন্তু তথ্য ও সত্য তুলে ধরে লেখক তা খণ্ডন করেছেন। দ্রঃ মিশ্র সংস্কৃতির আবহমান ধারা। (আবু আরিফ, ‘কলম–সাহিত্য, ০৬ জানুয়ারি, ২০১৩)। তাঁর 'ওয়াকফ নামাহ’ – নিবন্ধের মতো এমন সুসংবদ্ধ রচনা, এর আগে আর কখনও দেখা যায় নি।
খাজিম আহমেদের এই চেতনিক নির্মাণ সমকালের একটি উজ্জ্বল স্বাক্ষর হিসেবে প্রত্যয়িত হবে, মান্যতা পাবে আকর গ্রন্থের-- এ বিষয়ে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। গ্রন্থখানির প্রকাশক হিসেবে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছি।
বিভাগ পরবর্তী ভারতের মুসলমানদের বঞ্চিত করার অপ্রয়াস কত ভয়ঙ্কর তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন গবেষক খাজিম আহমেদ।
বাঙালি মুসলমানদের মর্যাদার অন্বেষণ ইত্যাকার বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আলোকপাত করলেন তিনি। খাজিম আহমেদের লেখা গ্রন্থ পাঠ নিয়ে দুই বাংলার পাঠক সমৃদ্ধ হলেন।
পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা ।। খাজিম আহমেদ ।। উদার আকাশ, ঘটকপুকুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ।। প্রথম প্রকাশ, অক্টোবর ২০১২ ।। মূল্য ২০০ টাকা ।।
লেখক: ফারুক আহমেদ, প্রকাশক ও সম্পাদক উদার আকাশ।