🍂
*✍️@@কমলেশের কলম@@✍️*
🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈🌈
*জীবনের মূলচালিকাশক্তি নির্ভর করে আমাদের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ইচ্ছের উপর। ইচ্ছাপূরনের ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভিত্তিভূমির উপর দাঁড়িয়ে থাকে ভালোথাকা ও না থাকার চাবিকাঠি । আজ আমরা যে পরিস্থিতিতে বা যে অবস্থায় থাকিনা কেন , জীবনের পর্যাবৃত্ত গতি যতই কঠিন বা দুর্বিসহ হোক না কেন তার প্রধান কারণ আমাদের ইচ্ছা ও অনিচ্ছাজনিত কর্ম ও তার নির্ণয়।*
*নির্ণয় কিন্তু আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং দৈনন্দিন কর্মধারার গতি নির্ধারক। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এক একটি সিদ্ধান্ত বা নির্ণয় আমাদের বর্তমান কে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে । আগামীর চলার পথ তৈরী করে । এককথায় প্রতিটি নির্ণয় আমাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই নির্ণয় বা সিদ্ধান্ত আমরা কিভাবে নিই ? আমরা কি জানি আমরা ভালো থাকব না খারাপ থাকব?? এই সকল সম্পৃক্ত বিষয় কি সর্বদা এই নির্ণয়ের উপর নির্ভর করে ?*
*খুব ছোট থেকেই আমাদের সমস্ত সিদ্ধান্ত বা নির্ণয় মা ,বাবা নিয়ে থাকেন । মা ,বাবা তাঁদের সমস্ত টা দিয়ে তাদের সন্তানকে ভালো রাখার চেষ্টা করেন ও শ্রেষ্ঠ করে তোলার চেষ্টা করেন ।কিন্তু যখন আমাদের একটু একটু করে বড় হতে হয় কর্মক্ষেত্রে পড়াশুনো প্রভৃতি কর্মসূত্রে মা-বাবার থেকে দূরে থাকতে শিখতে হয় তখন আমাদের নির্ণয় একাকেই করতে হয় ।*
*মা বাবা আমাদের সবটা শেখানোর চেষ্টা করেন ঠিকই কিন্তু একা সিদ্ধান্ত নিতে শেখান না ! মা , বাবার হাত ধরে আমরা হাঁটতে অভ্যস্ত হই কিন্তু আমাদের জন্য একটা যে সুদীর্ঘ একলা ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে আছে তার কথা বেমালুম ভুলে যাই। ফলস্বরূপ সংকট মুহূর্তে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি , অস্থির হয়ে পড়ি। এই অস্থির মুহূর্তে যে কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্ণয় বেশিরভাগ ভুলে পর্যবসিত হয়।*
*তারপর প্রতিটি ভুলের জন্য অনুতাপ , অনুশোচনা ও প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় । সত্যের উদ্ভাসিত আলোকের মুখোমুখি হওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলি। ফলস্বরূপ যথোপযুক্ত কার্যে আমরা অকৃতকার্য হই। এই অকৃতকার্য হওয়া থেকে আসে হীনমন্যতা - হতাশা-ভয় ......আমরা বেশিরভাগ মানুষ এমন ভীতু হয়েই কাটিয়ে দিই আজীবন। আমরা সত্যের অন্বেষণ করি বটে কিন্তু সত্যের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে নিজেকে সত্যের আড়ালে রাখার চেষ্টা করতে থাকি , নিজেকে লুকিয়ে রাখি । মনে রাখতে হবে সত্যের আর এক নাম নির্ভীকতা ! যিনি ভীতু , আড়ালে থাকেন তাঁর পক্ষে সত্যের মুখোমুখি হওয়া কিভাবে সম্ভব?*
*কিন্তু জীবন কে প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায় , ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায় যখন ই কোনো সংকটকাল উপস্থিত হয়েছে তা সত্য কে না জানা বা অস্বীকার করার ফলেই হয়েছে। আমাদের প্রথাগত অশিক্ষার কারণে আমরা যতবেশি এই সংকট থেকে দূরে সরে যাই সত্য ও তত দূরে সরে যেতে থাকে । আমরা সংকট এর যত বেশি মুখোমুখি হতে পারব সত্য ও তত বেশি প্রকাশিত হতে থাকবে। অর্থাৎ ভালো-মন্দ সবটা কে যাঁর গ্রহণ করার ক্ষমতা যত বেশি সে ততবেশি সত্যের কাছাকাছি থাকে। একথা যে কতখানি সত্য তা তো এই সংকটকালে আমাদের প্রত্যেকের কাছেই প্রমাণিত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই শিক্ষা আমরা কেউই শিশুকাল থেকে পাইনি।*
*আমরা প্রত্যেকেই পিতা,মাতা, দাদা, ভাই, বোন , বন্ধু .....কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত । আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে এক সুস্থ, সুন্দর ,প্রগতিশীল সুরক্ষিত জগৎ উপহার দিয়ে যেতে যেখানে তারা পরিশীলিত সমাজ ব্যবস্থায় নিশ্চিন্ত থাকতে পারে । কিন্তু আমরা কি দিয়ে যাচ্ছি !*
*আমরা দিয়ে যাচ্ছি আমাদেরই অসচেতন ক্রিয়াকলাপ হেতু সৃষ্ট এক ভয়ঙ্কর সংকটকাল ।*
*আমরা দিয়ে যাচ্ছি আমাদের স্বার্থান্বেষী ও আত্মকেন্দ্রিক কর্মধারার দুর্বিসহ পরিণাম । আমাদের সমস্ত পরাজয় , আমাদের ব্যর্থতা ।*
*আমাদের প্রতি পদক্ষেপে আমরা উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করি , নির্ণয় নেই এবং আমাদের প্রতিটি নির্ণয় আমাদের ভবিষ্যতের পথ সুগম ভাবে তৈরী করে ! আমাদের এই নির্ণয়ের পরিণাম সইতে হয় আগামীর ধারক ও বাহক পরবর্তী প্রজন্ম কে । কিন্তু আমরা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিই তার বেশিরভাগ সর্বদা আমাদের মন কে , মনের সংশয় কে শান্ত করার জন্যই নিয়ে থাকি । মনে করে দেখুন তো শান্ত চিত্তে , পূর্ণ সচেতন হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিই কি? আমরা সবাই জানি মন চিরচঞ্চল ও সদা পরিবর্তনশীল । তাহলে মন কিভাবে কোনো সংকটময় মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারে?*
*আজ আমাদেরই কৃতকর্মের কারণে আমরা গৃহবন্দী। শিশুরা তাদের শৈশবের প্রানোচ্ছ্বল আনন্দ থেকে বঞ্চিত। বয়স্করা গুনছে প্রমাদ ! রাষ্ট্র থেকে বিশ্ব সমস্ত ক্ষেত্রে অর্থনীতি সহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সব বিপন্ন ! সামনে আরও বড় কি সংকট অপেক্ষা করছে তা আমরা জানিনা ! অথচ আমরা এখন ও কি সচেতন ! এখন ও আমরা সত্যের থেকে কত দূরে ! রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, প্রজানীতি থেকে শাসননীতি সবক্ষেত্রে সেই স্বার্থান্বেষী সংকীর্ণ দলাদলি । হিংসাত্মক দ্বিচারিতা বিষবাষ্পের মত সমগ্র সমাজ সংস্কৃতিকে গ্রাস করে ফেলছে ।শুধুই ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে আজ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত । নেতা থেকে শাসক , উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবৃত্ত ও শ্রমিকশ্রেণী সবকিছুর মধ্যে এক বিভেদের শক্ত প্রাচীর ভয়ঙ্করভাবে দৃশ্যমান। আজ এতদিন পরে ও শাসনব্যবস্থা দিশেহারা । শাসক তার নিজস্বতার গন্ডীতে সঠিক নির্ণয় নিতে পারছে কি? একদিক কে বাঁচাতে গিয়ে আর একদিকের ভয়ঙ্কর পরিণাম সহ্য করতে হচ্ছে।*
*এই মুহূর্তে শিক্ষিত মানবজাতিই সর্বোত্তম হাতিয়ার ! একমাত্র তাঁরাই পারে এই সংকটকালে সচেতনভাবে লড়াই করতে। শাসক তার নিয়মনীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক আইন প্রণয়ন করুক । কেবলমাত্র অজ্ঞ সাধারণ মানুষ কে শাসননীতি মেনে সংকটকালে স্থির থেকে সত্যকে জানাতে পারে একমাত্র সচেতন ব্যক্তিরাই। জাতির এই সংকটকালে আমাদের শিশুদের সঠিক শিক্ষা দেওয়ার ভার আমাদেরই নিতে হবে। যাতে তারা ভবিষ্যতে তাদের কারণে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে এমন সংকটে না ফেলে যায়! সমস্ত সংকটে নিজেরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারে !*
*আমরা জানি মানুষ শুধুই কল্পনা করতে পারে কিন্তু সেই কল্পনা কে পরিকল্পনায় পরিণত করতে পরিস্থিতির , অস্তিত্বের আশীর্বাদের প্রয়োজন । তবুও মানুষ যদি অবস্থাভেদে সচেতন হয়ে সংকটকালে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে সত্যের অনুসন্ধানে ব্রতী হয় তাহলে অস্তিত্ব কখনোই তার বিরূপ হতে পারে না । অস্তিত্ব সত্যানুসন্ধানীদের সর্বদা আশীর্বাদ করে । কারণ অস্তিত্বই অবিসংবাদী সত্য যা সদা প্রবহমান । সত্য তো তাই যা আমাদের সর্বদা আনন্দে রাখে । আমাদের সংকটের সঙ্গে সঙ্গে সত্যের অনুসন্ধান করা উচিত না হলে আমাদের প্রতিটি নির্ণয় হবে সত্যের পরিপন্থী যার কারণে অদূর ভবিষ্যতে আমরাই অস্তিত্বের কাছে সংকট হয়ে উঠতে পারি !*
*তখন হয়তো আমরাই অভিশাপ হয়ে যাব আগামী প্রজন্মের কাছে।*
*-সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই সংকট কালেই সৃষ্টি হয়েছে শক্তির । তাই এই সংকটই আমাদের শক্তির উৎস স্বরূপ । সংকটকালেই জ্ঞানের আলো প্রকাশিত হয় । সচেতনতা , আশার আলো হয়ে উদ্ধার করতে আসে সমগ্র মানবজাতিকে।*
*সচেতনতা হয়ে উঠুক আমাদের অন্তরের বহিঃপ্রকাশ । ইহাই আমাদের জাগ্রত সত্তা আমাদের অন্তরের ধ্যানময়তা , আমাদের আগামীর পরিচয়। আমাদের আগামীর আলোময় প্রকাশ তো আমাদের হাতেই রয়েছে শুধু আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে আছি । বহ্ন্যুৎসব সচেতনতার মধ্যে দিয়ে আলোকজ্জ্বল কিরনমালায় ও আনন্দের ফল্গুধারার প্রবাহমানতায় উদ্ভাসিত হোক জগৎ । জগৎময়ী মাতার কাছে নত মস্তকে এই কামনা করি ।*