হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিবস উপলক্ষে স্মরণ অনুষ্ঠান,

নিজস্ব সংবাদদাতা, 

কলকাতা :

 হযরত মুহাম্মদ সা.-এর জন্মদিবস উপলক্ষে পুবের কলম আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিড়ে উপচে পড়ল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কসার্কাসস্থিত ক্যাম্পাসের মূল অডিটোরিয়ামটি।




 কলকাতার মহানাগরিক ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, প্রাবন্ধিক জাহিরুল হাসান, প্রাক্তন সাংসদ ও বিশিষ্ট লেখক মইনুল হাসান, নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাসেমি, সংগঠক ওয়ায়েজুল হক, সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহ, প্রাক্তন পুলিশ অফিসার মসিহুর রহমান, একে এম ফারহাদ, শিল্পী পলাশ চৌধুরীসহ বহু বিশিষ্টজন উপস্থিত হন অনুষ্ঠানের শুরুতেই।  

 উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানান এই মহত্তর স্মরণ অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করার আমন্ত্রণ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। 

আমি কৃতার্থ মুগ্ধ বিমুগ্ধ। নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর প্রতি মানুষের এই ভালবাসা ও আবেগ দেখে মুগ্ধ হন অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা পুবের কলমের সম্পাদক ও সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। 

তিনি বলেন, মুহাম্মদ সা.-এর জন্য ‘মুহাব্বতে’ই আজকের এই বিপুল দর্শক- সমাগম।

 দক্ষিণ দিনাজপুর– বর্ধমান– নদিয়া– চব্বিশ পরগনা-সহ দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এসেছেন প্রিয়নবী সা.-এর টানে। 

 এদিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় জিব্রিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মাওলানা সাব্বাব সাহেবের কুরআন তিলওয়াতের মাধ্যমে। 

সূরা আদ-দোহার আরবি তিলাওয়াতের বাংলা অনুবাদ পেশ করেন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা মহানবী মুহাম্মদ সা.-এর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। 

পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিশ্বনবী সা.-এর উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন– হযরত মুহাম্মদ সা. শুধু মুসলিমদের জন্য পৃথিবীতে আসেননি, তিনি সব ধর্মের–সব-বর্ণের মানুষদের জন্য এসেছিলেন। 

মানবতাকে পরিপূর্ণ করার জন্যই মহানবী সা.-এর আগমন বলে তিনি উল্লেক করেন। 

এদিন ফিরহাদ  হাকিম প্রিয়নবী সা.-এর সহনশীলতার উদাহরণ দিয়ে বলেন– ‘অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি– বিশ্বের মানুষের জন্য তাঁর দরদ– সহানুভূতির জন্যই তিনি ‘বিশ্বনবী’।

 চাকর–অনাথদের সঙ্গে ব্যবহার–রাষ্ট্রশাসন-নীতি–ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, আজকের মুসলিমরা তা থেকে বিচ্চুত হয়েছে বলেই জাতির এই অধঃপতন। 

মুহাম্মদ সা. শত্রুকেও মাফ করে দিতেন– প্রতিশোধ নিতেন না। তাঁর চলার রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখা এক বুড়িকেও তিনি অসুস্থ হলে দেখতে গিয়েছেন। 




মহানবী সা.-এর এই অনুপম চরিত্রের জন্যই ইসলাম বিশ্বজয় করতে পেরেছিল। আজ আমাদের মধ্যে সেই চরিত্রের অভাব ঘটেছে বলেই আমরা ভাবি– আমরা অসহায়– আমাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে।
 মুসলিম জাতি আজ পিছিয়ে– হীনমন্যতায় ভুগছে।’

 বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও ইতিহাস-গবেষক জাহিরুল হাসান তাঁর বক্তব্যে ‘মানুষ’ নবী সা.-এর বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলেন। হযরত মুহাম্মদ সা.-এর চরিত্রের বিনয়–নির্লোভ– পরোপকারী প্রভৃতি গুণগুলি তিনি উল্লেক করে বলেন– মুহাম্মদ সা. এমন বিনয়ী ব্যক্তি ছিলেন। 

নিজেকে অত্যন্ত সাধারণ একজন হিসেবে ভাবতেন। কর্তৃত্বের দাপট প্রদশর্ন করতেন না। ঘরের কাজ নিজে করতেন। 

নিজের জামা-কাপড় নিজে সেলাই করতেন। একজন রাষ্ট্রনেতার এমন জীবনযাপন আমাদের আশ্চর্য করে!  জাহিরুল হাসান বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন– এখনকার নেতা-মন্ত্রীরা নিজের পরিবারের পুত্র বা অন্যদেরকে উত্তরাধিকার তৈরি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকেন। 

কিন্তু মুহাম্মদ সা. কোনও উত্তরাধিকার নিয়োগ করে যাননি। গনিমতের মাল তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য দান করে দিতেন। 


এটাই ছিল তাঁর মহানুভবতা।  বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের পক্ষ থেকে ওয়ায়েজুল হক এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন, মুসলিমদের মধ্যে ভেদাভেদকে  দূর করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন– নিজেদের মধ্যে লড়াই করে কোনও লাভ নেই। আমরা যদি নবীজী সা.কে সত্যিকারের ভালোবাসি– তবে ঐকবদ্ধ থাকব। 




 ওয়ায়েজুল হক তাঁর বক্তব্যে মা-বাবার প্রতি ভালোবাসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। নিজের পিতামাতাকে সঠিক সম্মান ও ভালোবাসা না দিলে সমস্ত কাজই নিষ্ফল হয়ে যাবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। উপস্থিত দশর্করা তাঁর মর্মস্পর্শী বক্তব্যে শুনে অভিভূত হন। 

 এদিনের সভায় নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাসেমি বাবরি মামলার রায় প্রসঙ্গে বলেন– মুসলিমদেরকে ‘সবর’ করতে হবে। এই দেশ–সুপ্রিম কোর্ট আমাদের।

 খোনকার জনগণও আমাদের ভাই। তাই কোনও হিংসা–ঝগড়া নয়।  

 পুবের কলম আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাংসদ ও বিশিষ্ট লেখক মইনুল হাসান। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে সত্যের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন তিনি।

 মহানবী সা. বদর যুদ্ধে বন্দিদের মুক্তি দিয়েছিলেন সাহাবাদের লেখাপড়া শেখানোর বিনিময়ে। এই ঘটনা উল্লেখ করে মইনুল হাসান জানান– ‘কোনও রাষ্ট্রনেতা এমন শর্তে কখনও বন্দিদের মুক্তি দেননি। 

এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়– তিনি শিক্ষাকে কত গুরুত্ব দিতেন। এমন নবী সা.-এর জন্য বিশ্ব গর্ব অনুভব করে।’
AB Banga News-এ খবর বা বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুনঃ 9831738670 / 7003693038, অথবা E-mail করুনঃ banganews41@gmail.com