অফিস ডেস্ক,
যখন ওই ট্রেনের কামরায়,বা প্ল্যাটফর্মের আলোয় বই খুলে বসে কোনো বাচ্চা।বিদ্যাসাগর জন্মান নতুন করে।
যখন রিকশা চালকের, জন মজুরের টালির ঘর থেকে উঠে আসে মাধ্যমিকের কৃতি।
নবরূপে আবির্ভূত হন তিনি।
যখন শিক্ষক শিক্ষিকারা নাবালিকা মেয়েটিকে নিয়ে যান থানায়, বিয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে।
শ্রদ্ধার অঞ্জলি ঝরে পড়ে বিদ্যাসাগরের পায়।
যখন উৎসবের খরচ বাঁচিয়ে, টিফিনের টাকা জমিয়ে কেউ অনাথ বাচ্চাদের হাতে তুলে দেন পুজোর জামা, পড়ার বই।
বিদ্যাসাগর হাসেন তৃপ্তির হাসি।
অবসর প্রাপ্ত মানুষটি যখন পিএফ এর সব টাকা দিয়ে দেন স্কুল বা হাসপাতাল বানানোর জন্য। আনন্দে চিকচিক করে তাঁর চোখ।
যদি অত্যাচারী, দাম্ভিক, অসৎ শাসকের সামনে তুলে ধরতে পারি, প্রতিবাদের কণ্ঠ। বিদ্যাসাগর চেঁচিয়ে ওঠেন সাবাস।
সাহেবের মুখের সামনে জুতো পরা পা তুলে ধরার কথা মনে পড়ে যায় হয়তো।
হয়তো বলেন তোরা আছিস,তাই তো আমার বেঁচে থাকা।
বিদ্যাসাগর মরেনও রোজ।
যখন বাংলা বই পড়তে পারিনা বলে দূরে ঠেলে আমার আপনার বাড়ির বাচ্চা।
সেই তাচ্ছিল্যে লজ্জায় মরেন বিদ্যাসাগর।
যখন কন্যা সন্তান হয়েছে বলে বউকে গঞ্জনা দেন কোনো পরিবার,শিশু কন্যাকে আছড়ে মারে তার বাবা।
আসলে তো মরেন সেই মানুষটাই।
যখন অসৎ কোনো নেতার কাছে গিয়ে করুণা ভিক্ষা করি, অনুকম্পা লাভের আশায় ঝুঁকিয়ে দিই কৃতার্থের মস্তক।
তিনি পোড়েন ধিক্কারের আগুনে।
যখন মেয়েকে পড়িয়ে কী হবে? ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেব। ভাবেন আমি আপনি, আপনারা। বিদ্যাসাগর কলেজের ভিতগুলো থরথর করে কেঁপে ওঠে আর্তনাদে।
যখন তাঁর মূর্তি ভাঙা বাঙালির পাঁজর না ভেঙে, হয়ে ওঠে শুধু রাজনীতির ইস্যু। তিনি মরেন ধিক্কারে লজ্জায়।
যখন মিথ্যে বলা, হুমকি দেওয়া মুখগুলোয় আসে তাঁর স্তুতি, ঘুষ নেওয়া নোংরা হাত মালা দেয় তাঁর গলায়, তিনি মরেন বারবার।
গ্লানিতে,অপমানে,নিস্ফল ক্রোধে।
যখন আজও এই পৌনে দুশো বছর পরেও, বিধবা বা ডিভোর্সি বিয়ে করলে, আমরা মুখ বেঁকাই।তাচ্ছিল্য ভরে বলি, " আর মেয়ে পেলিনা, শেষে কিনা সেকেন্ড হ্যান্ড!!!"
বিদ্যাসাগর মশাই বলেন, হে ধরণী দ্বিধা হও। এদের হাতের পুজো নেওয়া থেকে বাঁচাও।
আসলে তো বিদ্যাসাগর মরেন না, মরি আমরা,বিস্মৃত নিদ্রিত বাঙালিরা।তিনি তো শুধু এক মানুষ নন। এক আদর্শ, এক লড়াই,এক প্রতিবাদ। তাঁকে সম্মান জানানো মানে তো তার আদর্শকে সম্মান করা।আদর্শকে সম্মান মানে তো তাকে লালন করা,চর্যা করা।
যদি তাই না পারলাম। তাহলে কী লাভ মেকি বন্দনায়?কী লাভ ফুল মালা ধূপের উৎসবে?তিনি থাকুন বইয়ের পাতায়, দেয়ালের ছবিতে।
আমরা বরং তাঁকে সম্মান জানানোর যোগ্যতা অর্জন করি আগে।তারপর ফুল মালা তো রইলোই।