নিজস্ব প্রতিবেদক,উলুবেড়িয়া,
অন্ধ,গোঁড়ামি , কুসংস্কার দুরে সরিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় উলুবেড়িয়া-১নং ব্লকের তপনা পঞ্চায়েতের উত্তর দোড়োল গ্রামে এক গর্ভবতী মহিলার ধর্মীয় কারণে হাসপাতালে যেতে অনিচ্ছুক পরিবারের সিদ্ধান্ত বদলে দিল ব্লক প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের যৌথ উদ্যোগ।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দোড়োল গ্ৰামে (পোঃ কাশমুল, সমরুক সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র অন্তর্গত) এলাকার বাসিন্দা আরিফা খাতুনের সঙ্গে, যিনি গত ০৫ ই মে সন্ধ্যায় প্রসব বেদনা অনুভব করেন।
পরিবারটি ধর্মীয় কারণে চিকিৎসালয়ে যেতে রাজি ছিলেন না, যার ফলে গৃহে প্রসূতির প্রসব সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এই খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে ওঠেন উলুবেড়িয়া-১নং ব্লকের বিডিও এইচ. এম. রিয়াজুল হক এবং উলুবেড়িয়া ১নং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ অর্পিতা রায়। তাঁদের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত প্রধান আশমেরা বেগম, ANM মানসী জাসু ও স্থানীয় আশাকর্মী রুকসানা বেগম পরিবারটির সঙ্গে বারংবার যোগাযোগ করেন, এবং পরিবারটিকে বোঝান ধর্মের চেয়ে জীবনের গুরুত্ব অনেক বেশি।
পরিবারটি শেষপর্যন্ত ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সে সম্মত হয় এবং রাতেই রোগিনীকে ভর্তি করা হয় উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে জন্ম নেয় এক ৩.৭ কেজি ওজনের সুস্থ পুত্রসন্তান। বর্তমানে মা ও সন্তান—উভয়েই সুস্থ ও নিরাপদ।
উলুবেড়িয়া ১নং ব্লক প্রশাসনের সূত্র জানায়, এটি কেবল একটি পৃথক ঘটনা নয়—গৃহপ্রসূতি রোধে প্রশাসনের ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই প্রতিফলন। পরিসংখ্যান বলছে,
২০২২-২৩ অর্থবছরে গৃহপ্রসূতি ঘটেছে ৫৭টি,
২০২৩-২৪-এ তা কমে হয়েছে ৩৩টি,
এবং ২০২৪-২৫ সালে (এখন পর্যন্ত) মাত্র ১৮টি ঘটনা ঘটেছে।
উলুবেড়িয়া-১নংব্লক প্রশাসনের সচেতনতা কর্মসূচি, গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প, প্রশিক্ষণ, ASHA ও ANM কর্মীদের সক্রিয়তা এবং পঞ্চায়েত স্তরের নজরদারিই এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
উলুবেড়িয়া ১নং বিডিও এইচ. এম. রিয়াজুল হক বলেন, "প্রতিটি মায়ের জীবন মূল্যবান। ধর্মীয় বা সামাজিক যেকোনো প্রতিবন্ধকতার ঊর্ধ্বে উঠে আমরা নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।"
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ অর্পিতা রায় জানান,
"গৃহপ্রসূতি মানেই উচ্চ ঝুঁকি—এটা গ্রামে গ্রামে বোঝাতে আমরা চিকিৎসক দল, ANM ও ASHA কর্মীদের নিয়ে কাজ করছি। এই ঘটনাটি আমাদের সাফল্যের একটি উদাহরণ।"
এই ঘটনা নিঃসন্দেহে হাওড়া জেলার জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে, যেখানে এখনও মাতৃমৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে রয়ে গেছে।
প্রশাসনের এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও অনেক জীবন বাঁচাবে বলেই আশা।
---